‘বুলিংয়ে’ও নিশ্চুপ বাফুফে, তদন্তের মাঝেই বিকল্প দল বাটলারের!

ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের আজকের অনুশীলনে ৩১ জন ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। সিনিয়র দলে থাকা ১২ জনের সঙ্গে এখন যোগ দিয়েছে আর্মি ও বিকেএসপির ফুটবলাররা। এরা মূলত অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ের। বিকেএসপির মহাপরিচালক আসার পরও সাবিনা খাতুনদের সঙ্গে বয়কটে থাকা বিকেএসপির তিন বর্তমান শিক্ষার্থী আগের অবস্থান থেকে সরে আসেননি।
সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদাসহ ১৮ ফুটবলার বাটলারের অনুশীলন বয়কট করে চলছেন। তাদের বিকল্প তৈরি ও পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন করতেই বাটলার জুনিয়রদের তৈরি করার চেষ্টা করছেন। একদিকে তদন্ত করছে ফেডারেশনের বিশেষ কমিটি, অন্যদিকে তারা আবার বাটলারকে দিয়ে অনুশীলন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। বাটলারও নতুন নতুন খেলোয়াড় অনুশীলনে আনছেন, যা ফেডারেশনের সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। মে মাসে রয়েছে সাফ অ-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। ওই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জুনিয়র দল প্রস্তুত করার কথা বললেও, যদি সাবিনারা শেষ পর্যন্ত বয়কটেই থাকেন তাহলে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে জুনিয়র দলই আরব আমিরাতে পাঠানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা করছে বাফুফে।
মাঠে খেলেন ফুটবলাররা। তাদের পারফরম্যান্সেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দল। কোচেরও অবশ্যই অবদান থাকে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২৩ জনের স্কোয়াডে ১৬ জনই কোচের বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কোচ নিয়ে খেলোয়াড়দের বড় অংশের বিরোধ বাফুফের আগেই জানা। এরপরও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা না করেই বাফুফে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের চুক্তি ১৫ জানুয়ারি দুই বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছে। অথচ যারা চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন, সেই খেলোয়াড়দের চুক্তি অক্টোবরে শেষ হলেও এখনও নবায়নই করতে পারেনি। খেলোয়াড়দের চেয়ে কোচেরই যে প্রাধান্য বেশি এতেই স্পষ্ট। দেড় কোটি টাকা বোনাস ঘোষণার কথাও যেন ভুলেই গেছেন ফেডারেশনের কর্তারা!
১৮ নারী ফুটবলারের বিদ্রোহের ঘটনা এখন আর শুধু ক্রীড়াঙ্গনে সীমাবদ্ধ নেই। এ নিয়ে নাগরিক জীবনের আলোচনায় ঝড় উঠছে রীতিমতো। পেশাদার ও জাতীয় ফুটবলার হিসেবে কোচ নিয়ে করা ফুটবলারদের দাবি ও অবস্থান নিয়ে সমালোচনা বা প্রশ্ন থাকতেই পারে। সামাজিক মাধ্যমে এখন আন্দোলনকারী মেয়েদের ব্যক্তিগত পর্যায়ের সমালোচনা করা হচ্ছে। যা অনেকটাই সাইবার বুলিংয়ের শামিল। নারী ফুটবলাররাও এতে ধৈর্য্য হারাচ্ছেন। তারাও বাজে মন্তব্য করছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যদিও পরক্ষণেই ‘সেসব মন্তব্য পেজ/অ্যাকাউন্ট অ্যাডমিনের ছিল’ বলে দুঃখ প্রকাশও করেছেন তাদের একজন।
বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করলেও বিদ্রোহ করা মেয়েরা বাফুফে ভবনেই রয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সমালোচনা ও হেয় হলেও বাফুফে যেন তাদের পাশে নেই। মানসিক সান্ত্বনা বা কোনো নির্দেশনা দেননি বাফুফের কোনো কর্মকর্তা। গতকাল সামাজিক মাধ্যমে এমন একটি অভিযোগ ঘুরে বেড়াচ্ছে নারী ফুটবলকে নিয়ে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ফেডারেশনের শৃঙ্খলা, নৈতিকতাও এর সঙ্গে চরমভাবে সম্পর্কিত। সাধারণ ফুটবলপ্রেমী বা নারী সমাজ এতে খুব বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ফেডারেশন তাদের অফিসিয়াল পেজে একটি সাধারণ বিবৃতি দিলে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা আস্থা ফিরে পেত। বাফুফে যেন সেই পথে হাঁটতে চায় না।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গঠিত বিশেষ কমিটি গতকাল পর্যন্ত সকল নারী ফুটবলারের অভিযোগ শুনেছেন। ১৮ জনই বাটলারের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আবারও কমিটি বসবে। কোচিং স্টাফের বক্তব্য শোনার সম্ভাবনা রয়েছে আজ। আগামীকাল বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফেডারেশনে আসার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশেষ কমিটির সভাপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা।