চলতি বছর পশ্চিম তীরে ১০ শিশুসহ ৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ১০ জন শিশুসহ ৭০ জনকে হত্যা করেছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলের প্রাণঘাতী অভিযানে জেনিনে ৩৮ জন, তুবাসে ১৫ জন, নাবলুসে ছয়জন, তুলকারেমে পাঁচজন, হেবরনে তিনজন, বেথেলেহেমে দুইজন এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে একজন নিহত হয়েছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত মাসে ওই অঞ্চলে “আয়রন ওয়াল” নামে একটি ব্যাপক প্রাণঘাতী আক্রমণ শুরু করে। বিশেষ করে জেনিন এলাকায় সক্রিয় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে এই অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহত ১০ শিশু ছাড়াও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একজন নারী ও দুই বয়স্ক ফিলিস্তিনিকেও হত্যা করেছে।
এদিকে সোমবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্সি ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করে জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনিরা পুনর্বাসন পরিকল্পনা বা “বিকল্প আবাসভূমি” গ্রহণ করবে না।
মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “(ইসরায়েলি) দখলদার কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের বাস্তুচ্যুত এবং জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্প্রসারণ করছে।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের এই বিতর্কিত নীতির কারণে শত শত লোক আহত হয়েছেন বা আটক করা হয়েছে। জেনিন এবং তুলকারেম শরণার্থী শিবিরের আবাসিক ব্লকগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করার পাশাপাশি হাজার হাজার নাগরিকের বাস্তুচ্যুতি এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গত রোববার ইসরায়েলি বাহিনী জেনিন শরণার্থী শিবিরের ২৩টি ভবন ধ্বংস করেছে, এর ফলে চলমান অভিযানে এই শিবির থেকে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে তুলকারেম শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলার ফলে ওই এলাকা থেকে ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে ক্যাম্পের পপুলার কমিটির প্রধান ফয়সাল সালামা আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বা এমএসএফ সোমবার ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। সংস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, “গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে, বিশেষ করে জেনিন, তুলকারেম এবং তুবাসে চরম সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অগ্রহণযোগ্য।”
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নিয়েছিল। তবে গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরকেও ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল অংশ হিসেবে দেখে থাকে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সৈন্য বা বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ৮৮২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।