নামাজ-রোজার পাশাপাশি অন্যের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে

নিজেস্ব প্রতিবেদক: টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব বয়ান করেছেন মাওলানা আহমাদ লাট। তর্জমা (অনুবাদ) করেছেন মাওলানা ওমর ফারুক। বয়ানে কোরআন সুন্নাহ, রাসূল সা. ও সাহাবিদের অনুসরণ, পারস্পরিক সহাবস্থান ও তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ সময় তিনি বলেছেন, ‘তাবলিগের কাজকে প্রথাগত কাজ মনে করা যাবে না বরং তা নবিওয়ালা কাজ মনে করতে হবে। মানুষের হক নষ্ট করে তাবলিগের কাজ করা যাবে না।’
বয়ানে মাওলানা আহমাদ লাট বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রহমান, দয়ালু সবার ওপর দয়া করেন তিনি। কোনো বিনিময় ছাড়া তিনি বান্দার ওপর দয়া করেন, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ও বান্দা হিসেবে আমাদেরও সবাইকে ক্ষমা করার গুণ অর্জন করতে হবে। আমরা যখন প্রতিশোধ না নিয়ে কাউকে ক্ষমা করবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যত নেয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো দ্বীন। এই নেয়ামতের হক হলো দ্বীন শেখা, জানা ও বোঝা। মানুষকে এই দ্বীন বোঝানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক যুগেই নবি পাঠিয়েছেন। নবিরা পৃথিবীতে এসে মানুষকে দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের নবি হজরত মুহাম্মদ সা.-ও একই দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের নবিসহ পূর্ববর্তী সব নবিই মানুষকে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে এক হিসেবে মেনে নাও। এবং তারা বলেছেন, আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বার্তা বাহক। তৃতীয়ত তারা বলেছেন, আমরা আল্লাহর পথে আহ্বানের ফলে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। বিনিময় ছাড়াই আমরা তোমাদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করছি।’
আহমাদ লাট বলেন, ‘রাসূল সা. যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন মদিনার অবস্থা নাজুক ছিল। সেখানে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে ছিল। সমাধানের জন্য তিনি কাউকে টাকা পয়সা বা দুনিয়ার কোনো প্রলোভন দেখাননি। বরং তিনি বললেন, কেউ তার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক ঠিক করলে আল্লাহ তায়ালা তার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করে নেবেন। মদিনাবাসী যখন মহানবী সা.-এর এই কথা মেনে নিলেন, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করলেন তাদের মাঝে মারামারি, হানাহানি, রাহাজানি বন্ধ হয়ে গেল, তারা ভাই ভাই হয়ে গেলেন। একে অপরের পরম আপন হয়ে গেলেন। এই দ্বীন দুনিয়াকে এবং দুনিয়ার মানুষকে শান্ত করার জন্য দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মদিনায় সাহাবিদের জীবনী। তাই আমাদেরও তাই অনুসরণ করতে হবে।
যখন মদিনাবাসী রাসূল সা.-এর কথামতো দ্বীন মেনে নিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে দিলেন। তখন মদিনায় আর কারো মাঝে দুনিয়াবি কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকল না তারা ভাই-ভাই হয়ে গেলেন।’
তিনি বলেন, ‘রাসূল সা. মদিনাবাসীকে দ্বীন ও আল্লাহর হুকুম মানার কথা বলেছেন। আল্লাহর হুকুম মানার পদ্ধতি হলো কোরআন অনুসরণ করা। যখন মানুষ আল্লাহর কালাম অনুযায়ী জীবনযাপন করবে তখন তাদের মাঝে কোনো বিভেদ থাকবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা আল্লাহর কালামকে নিজের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এ কারণে আমরা সব কল্যাণ থেকে দূরে। সাহাবিরা আল্লাহর কালাম, নবীর তরিকা মেনে চলেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সামনে থেকে আল্লাহর কিতাব, নবীর তরিকা নেই। তাই আমাদের জীবন অশান্তিতে ভরে গেছে। তাবলিগ, বিশ্ব ইজতেমা এবং তিন দিন, ৪০ দিন, চার মাস আল্লাহর রাস্তায় সময় দেওয়ায় মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. বলেছেন, দাওয়াত অর্থাৎ তাবলিগের কাজকে প্রথাগত কাজ বানানো যাবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীর জন্য বিজনেসের মনোভাব থাকতে হয়, চাকুরিজীবীদের ভেতরে অফিসের ম্যানেজমেন্ট বোঝার মনোভাবে থাকতে হয়। আর তাবলিগের কাজ নবিদের কাজ, তাই তাবলিগের কাজের জন্য নববী মনোভাবে রাখতে হবে। এটাকে প্রচলিত বা প্রথাগত কাজ হিসেবে মনে করা যাবে না।’