‘নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন মারাত্মক কবিরা গুনাহ’
ধর্ম ডেস্ক: নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন মারাত্মক কবিরা গুনাহ এবং আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জুমার বয়ানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের প্রতি অবিচার কোন সুস্থ বিবেকের মানুষের কাজ নয় নারী আমাকে জন্ম দিয়েছেন, আমি নিজেও একদিন ছোট্ট শিশু ছিলাম। তাই ইনসাফপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নারী ও শিশুর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, আমরা বাহ্যিকভাবে যেগুলোকে নির্যাতন বা অবিচার মনে করি, এর বাহিরেও অনেক ধরনের জুলুম অবিচার এবং নির্যাতন রয়েছে। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে অমুসলিম বা খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি করা, শিশুকে কোরআন-সুন্নাহ ও দ্বীন না শেখানো এক প্রকার নির্যাতন। মেয়েকে কন্যাকে অবহেলা করা, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে হেয় করা অথবা পর্দার সাথে দ্বীন পালন করতে না দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্দানশীল নারীকে অপদস্ত করা এসব নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, আজকের যুগে নারীবাদীরা নারী অধিকারের নামে নারীকে পণ্য হিসেব উপস্থাপন করছে। আমরা দেশের সকল পত্র-পত্রিকা টিভি চ্যানেল ও রাস্তাঘাটের বিজ্ঞাপন-বিলবোর্ডে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করার প্রতিবাদ করছি। এসব অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেছেন, ইসলামে নারীর ন্যায্য অধিকার বিষয়ে সুবিন্যস্ত বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। আমরা এগুলোকে আল্লাহর বিধান হিসেবেই মানি। তবে এগুলো নিয়ে সংশয় সৃষ্টিকারী তথাকথিত নারীবাদীরা চাইলে আমরা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিতে প্রস্তুত আছি, ইনশাআল্লাহ!
জুমার আলোচনায় খতিব আবদুল মালেক আরও বলেন, ইদানীং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা অনেক বেশি শোনা যায়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা বলা হয় না। আলোচনার ধরনে মনে হয়, এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর অত্যাচার হয় না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের তাওহীদ বিরোধীদের হাতে তাওহীদের কালেমা পাঠ করার অপরাধে শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য অনেককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তাদের আচরণে মনে হয় তাকে নিশংসভাবে হত্যা করা কোন নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না। অথচ ইসলামে সকল নাগরিকের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান ও অধিকার আদায়ের কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু নির্যাতন ও অধিকার ইত্যাদি শব্দ অনেক ব্যবহার করি। কিন্তু সঠিকভাবে এগুলোর মর্মার্থ বুঝিনা। যার ফলে সম্প্রীতি-ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিষয়ে আমরা বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তির শিকার।
তিনি বলেন, কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নেক কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং গুনাহ ও অন্যায় অবিচারের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।
সমাজের নাগরিক মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক, সে যদি কোন কল্যাণের কাজ করে তাহলে তাকে সহযোগিতা করা ও সমর্থন করা ইসলামের নির্দেশ। মক্কার কাফেররা ইসলামপূর্ব যুগে একটি চুক্তি করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল মক্কার আশেপাশে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাকে সহযোগিতা করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চুক্তির অংশ ছিলেন। পরবর্তীতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ যুগেও তিনি ঘোষণা করেছেন, এখনও কেউ যদি আমাকে এমন কোন চুক্তিতে ডাকে তাহলে আমি সেই ডাকে সাড়া দিব।
অপরদিকে সমাজের যেকোন নাগরিক মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক, সে যদি কোন অন্যায়-অনাচার করে, তাহলে তা বাধা দেওয়া ইসলামের নির্দেশ।
হাদিসে বলা হয়েছে, তুমি তোমার ভাইকে জালিম ও মজলুম উভয় অবস্থায় সহযোগিতা করো। মজলুম যেই হোক না কেন তার পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আর জালেম যেই হোক না কেন তাকে জুলুম থেকে প্রতিহত করতে হবে। এটাই তাকওয়ার শিক্ষা।
জাতীয় মসজিদের খতিব বলেন, আল্লাহর শাস্তি অনেক কঠিন। জালেম যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন, আল্লাহর আজাব যখন আসে তখন খুব সামান্য কারণেও তাকে লাঞ্ছিত অপদস্থ ঘৃণিত হতে হয়। দুঃখজনক হলো, আমাদের বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, তাই তারা দ্রুতই অতীতের ঘটনা ভুলে যায় এবং একই রকম কাজ করতে থাকে।