৪০০ কোটি টাকা পাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :দেশের চলমান ডলার সংকট এবং রিজার্ভ ঘাটতি মোকাবিলায় বাজেট সহায়তার প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে চাওয়া হয়েছে এই সহায়তা।

এর অংশ হিসাবে ৪০ কোটি ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সাব প্রোগ্রাম-২ এর আওতায় এটি দিচ্ছে সংস্থাটি। ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিআরআইডি)’-এর মাধ্যমে বাজেট সহায়তা পাবে বাংলাদেশ।

সহায়তা প্রাপ্তি দ্রুত করতে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে অর্থ বিভাগ। গত ১০ নভেম্বর গঠিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সামষ্টিক অর্থনীতি) ড. জিয়াউল আবেদীনকে। এছাড়া সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (রাজস্ব-৩) তাসনোভা রহমান।

বাজেট সহায়তা বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, বাজেট সহায়তা একটি বিশেষ ধরনের সহায়তা। কেননা এটি কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচির বিপরীতে দেওয়া হয় না। সরকার তার প্রয়োজনমতো এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই অর্থ খরচ করতে পারে। এখানে যে সংস্থা বাজেট সহায়তা দেয় তার নিজস্ব কোনো শর্ত থাকে না। এটাই হলো বাজেট সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধা। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। ফলে বাজেট ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে বাজেট সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি রিজার্ভ বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে এই সহায়তা। সেজন্য সংকটময় সময়ে সরকার সব সময়ই উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে বাজেট সহায়তা কামনা করে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট সহায়তার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো সুদের হার হয় না। যেমন এডিবির অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে যেভাবে সুদের হার, রেয়াতকাল এবং পরিশোধের সময় ধরা থাকে এই সহায়তার ক্ষেত্রেও তাই।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এডিবি দুই অর্থবছর মিলে ৮০ কোটি ডলার বা প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বাজেট সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর মধ্যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাব প্রোগ্রাম-১ এর আওতায় ৪০ কোটি বা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থছাড় শেষ হয়েছে।

এখন চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাব প্রোগ্রাম-২ এর আওতায় ৪০ কোটি ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর এখন অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাব প্রোগ্রাম-২ এর আওতাধীন ঋণপ্রাপ্তির জন্য পলিসি অ্যাকশন চূড়ান্তকরণ এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য এই ‘প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

কমিটির সদস্যরা হলেন-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি এবং পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি। কমিটিতে আরও থাকছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি।

এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, অর্থ বিভাগের বাজেট-২ অনুবিভাগের প্রতিনিধি এবং একই বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের রাজস্ব নীতির যুগ্মসচিব সদস্য হিসাবে থাকবেন।

ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বুধবার যুগান্তরকে জানান, আগের প্রতিশ্রুত ৪০ কোটি ডলারের সঙ্গে আরও ২০ কোটি ডলার যোগ হয়ে মোট ৬০ কোটি ডলার আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ছাড় হবে বলে আশা করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাজেট সহায়তার অঙ্ক বাড়িয়েছে এডিবি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থ বিভাগের কমিটি গঠনের বিষয়ে আমার জানা নেই।

সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এডিবির প্রতিশ্রুতি এই বাজেট সহায়তা পেতে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে দেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি। গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন এডিবিসহ তিন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। সেখানে বাজেট সহায়তার বিষয়টি আলোচিত হয়।

বৈঠকে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান এবং ইআরডির সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এডিবি পক্ষে ছিলেন পরিচালক চিকদেম একিন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই এডিবির বাজেট সহায়তা অর্থ আসবে বলে আশা করছি।

Related Articles

Back to top button