ভালোবাসা ও আদর প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম চুমু বিনিময়

স্বাস্থ্য ডেস্ক :ভালোবাসা ও আদর প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম চুমু বিনিময়। কোন শিশুকে যখন কারো কোলে তুলে দেয়া হয়, তখন তিনি চুমুর মাধ্যমেই তার আবেগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে চান। চুমুর মাধ্যমেই প্রেম ও ভালোবাসা ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্কে রূপ নেয়। বিদেশে চুমুর মাধ্যমেই প্রাথমিক কুশল বিনিময় হয়। যে চুমুর মাধ্যমে এত ভাব বিনিময় সম্পন্ন হয়, সে চুমু স্বাস্থের জন্য কতটুকু ভালো বা মন্দ তা জানা থাকা সবার জন্য অতীব জরুরি।

প্রথমেই চুমুর ভালো দিকগুলো জেনে নেয়া যাক। চুমুর আদান-প্রদানে মুখে লালার প্রবাহ বেড়ে যায়। চুমু লালার প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুখ, মাড়ি এবং দাঁতের স্বাস্থ্য পরোক্ষভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে চুমুতে অংশগ্রহণকারী দু’জনের মুখের স্বাস্থ্য যেন ভাল থাকে। অর্থাৎ চুমু হতে হবে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ মুখের চুমু। লালাতে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান থাকে যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। শতকরা ৮০ ভাগ ব্যাকটেরিয়া যা মুখের লালাতে বিদ্যমান তা সাধারণত সবার মুখেই বসবাস করে অর্থাৎ এরা মুখের নরমাল ফ্লোরা। বাকি শতকরা ২০ ভাগ ব্যাকটেরিয়া সবার মুখে থাকে না অর্থাৎ এরা রোগ সৃষ্টি কারিও হতে পারে। চুমুর সময় লালার আদান-প্রদান রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পাশাপাশি এন্টিবডি তৈরি করে যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগে। একে আমরা ক্রস ইমমিউনোথেরাপি বলতে পারি। ক্রস ইমমিউনোথেরাপি পুন:সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

চুমুর ভালো দিক যেমন আছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস যা লালাতে বিদ্যমান তা চুমুর মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ যেমন ঠা-াজনিত সমস্যা সহজেই চুমুর মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে। অনেক ভিন্ন ধরনের ভাইরাস সাধারণ ঠা-াজনিত সমস্যার জন্য দায়ী। গ্যান্ডুলার ফিভারও চুমুর মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এপস্টেন বার ভাইরাসও লালার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। কোল্ড সোরের ক্ষেত্রে (ঠোঁটের ভাইরাস সংক্রমণ) হারপিস ভাইরাস চুমুর মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে মুখ, ঠোঁট বা অন্য কোন অঙ্গে। তাই সবার খেয়াল রাখতে হবে যে ঠোঁটের কোল্ড সোর যখন কার্যকর অবস্থায় থাকে তখন চুমু ও অনৈতিক ওরাল সেক্স থেকে বিরত থাকতে হবে।

মেনিঙ্গোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া ব্রেনের মেনিনজাইটিস রোগের জন্য দায়ী। এ ব্যাকটেরিয়া সরাসরি সংস্পর্শ, কফ বা হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়। গভীর চুমুর মাধ্যমেও এ ব্যাকটেরিয়া বিস্তার লাভ করতে পারে। সবার একটি কথা মনে রাখতে হবে পেরিওডন্টাল রোগ লালার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে অর্থাৎ চুমুর মাধ্যমেও পেরিওডন্টাল রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। এ কারণে আমেরিকান একাডেমি অব পেরিওডন্টোলজির অভিমত পরিবারের একজনের পেরিওডন্টাল রোগ থাকলে সবার পরীক্ষা করা উচিত।

গভীর চুমু বা ওরাল সেক্সের মাধ্যমে হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। প্যাপিওলোমা ভাইরাস আবরণী কোষ ও মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে অর্থাৎ এ ভাইরাস মুখগহ্বর, টনসিল এমনকি গলা পর্যন্ত সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের সাথে ওরাল ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। তাই প্যাপিওলোমা ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ মুখের ভিতর ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। তাই চুমু হতে হবে স্বাস্থ্যবান মুখের চুমু। তা না হলে চুমু আপনার জীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনলেও আনতে পারে।

চুমুর ক্ষেত্রে সতর্কতা :
* চুমুর সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনি নিজে অসুস্থ কিনা বা যার সাথে চুমু বিনিময় করবেন তিনি অসুস্থ কিনা? মুখের অভ্যন্তরে জটিল বা দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগ আছে কিনা অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
* কারো ঠোঁটে ও মুখে যদি খারাপ ধরনের আলসার, কোল্ড সোর, গোটা থাকে তবে চুমু না দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

* চুমু গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ের মুখের ও ঠোঁটের যতœ নিতে হবে।
* অনৈতিক ওরাল সেক্সে যারা অভ্যস্ত তাদের অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে বা বিশেষ পদ্ধতি ও সতর্কতা অবলম্বন করে চুমু দিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button